ছয়মাস পর শিশুর খাবার
বয়স
পেরিয়েছে ছয় মাস। শিশুর প্রধান খাবার মায়ের বুকের দুধ তো খাবেই, এ সময়
থেকে অন্য খাবারও তাকে দিতে হবে। কিন্তু মায়েরা বুঝতে পারেন না শিশুকে
কোন ধরনের খাবার খাওয়াবেন? আবার হঠাৎ করে শিশুরা অন্য খাবার খেতেও চায়
না। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস করাতে হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থার নাম
‘ওয়েনিং’। এই সময় মাসহ পরিবারের সবাইকে যথেষ্ট ধৈর্য ধরতে হবে।
ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে শিশুর জিহ্বাতে ‘টেস্ট বাড’ (বিশেষ ধরনের মাংসপেশি যার মাধ্যমে শিশু দুধ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে) তৈরি হয়। তাই খাবার সামান্য হলেও খেতে যেন সুস্বাদু হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তবে কখনোই আশা করা ঠিক নয় যে খাবার মজা হলেই শিশু পুরোটা খেয়ে ফেলবে। শিশুকে জোর করে খাওয়ানো উচিত নয়। একেক শিশুর চাহিদা ও পছন্দ একেক রকম হয়। পর পর দুই দিন কোনো খাবার না খেলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে শিশু ওই খাবারটি প্রতিদিন খাবে। এক সপ্তাহ পরে আবার সেই খাবারটি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
ছয় মাসের পর থেকে শিশুর প্রথম খাবার অবশ্যই শর্করা দিয়ে শুরু করা উচিত। যেমন নরম ভাত, আলু সেদ্ধ, হজমে সমস্যা না হলে ধীরে ধীরে ফল সেদ্ধ করে দেওয়াটা ভালো। যেমন: আপেল, গাজর, আঙুর, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, সেদ্ধ মিষ্টি কুমড়া, সুজি ইত্যাদি।
শিশুর খাবার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শিশুকে প্রতিদিন নতুন রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। শিশুর খাবার খাওয়ানোর বাটি, চামচ ও যিনি খাওয়াবেন তাঁর হাত অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে।’ শিশুকে ছয়-নয় মাস পর্যন্ত অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৯-১২ মাস পর্যন্ত শিশুকে খাবার দিতে হবে পাঁচ থেকে সাতবার। এই সময় সবজির খিচুড়ি দেওয়াটা খুব উপকারী। সবজি, চাল, ডাল, সয়াবিন তেলে সমস্যা না হলে মুরগির ছোট্ট এক টুকরা মাংস, কলিজা খিচুড়িতে মিশিয়ে খাওয়ান। সবজির মধ্যে আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, মূলা, শালগম, পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে।
হজমশক্তি ঠিক থাকলে সামান্য ধনেপাতা বা শাক দিয়ে দেখতে পারেন। নতুন খাবারের পদের পরিমাণ অল্প হতে হবে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যেসব শিশু মায়ের দুধের পরিবর্তে গরু বা অন্য কোনো দুধ বেশি খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বেশি। এমন অবস্থায় সবজির খিচুড়ি ও পানি খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আর বুকের দুধ খাওয়ার পরও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়, সেসব শিশুর মায়েদের পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি খেতে হবে।
শিশুকে মধু, ডিমের কুসুমও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে মধু না দেওয়াই ভালো। মধু দেবেন পরিমাণে খুবই কম। মাসে হয়তো দুই দিন। আধা চা-চামচ। ধীরে ধীরে দিন ডিমের কুসুম। বাইরের খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি খাবার বেশি খাওয়ান।
শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর পরিবর্তে তাকে খেলার ছলে খাওয়ান। মনে রাখবেন, সব শিশুর পছন্দ ও চাহিদা সমান নয়।
লেখক: চিকিৎসক
ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে শিশুর জিহ্বাতে ‘টেস্ট বাড’ (বিশেষ ধরনের মাংসপেশি যার মাধ্যমে শিশু দুধ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে) তৈরি হয়। তাই খাবার সামান্য হলেও খেতে যেন সুস্বাদু হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। তবে কখনোই আশা করা ঠিক নয় যে খাবার মজা হলেই শিশু পুরোটা খেয়ে ফেলবে। শিশুকে জোর করে খাওয়ানো উচিত নয়। একেক শিশুর চাহিদা ও পছন্দ একেক রকম হয়। পর পর দুই দিন কোনো খাবার না খেলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে শিশু ওই খাবারটি প্রতিদিন খাবে। এক সপ্তাহ পরে আবার সেই খাবারটি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
ছয় মাসের পর থেকে শিশুর প্রথম খাবার অবশ্যই শর্করা দিয়ে শুরু করা উচিত। যেমন নরম ভাত, আলু সেদ্ধ, হজমে সমস্যা না হলে ধীরে ধীরে ফল সেদ্ধ করে দেওয়াটা ভালো। যেমন: আপেল, গাজর, আঙুর, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, সেদ্ধ মিষ্টি কুমড়া, সুজি ইত্যাদি।
শিশুর খাবার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শিশুকে প্রতিদিন নতুন রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। শিশুর খাবার খাওয়ানোর বাটি, চামচ ও যিনি খাওয়াবেন তাঁর হাত অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে।’ শিশুকে ছয়-নয় মাস পর্যন্ত অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৯-১২ মাস পর্যন্ত শিশুকে খাবার দিতে হবে পাঁচ থেকে সাতবার। এই সময় সবজির খিচুড়ি দেওয়াটা খুব উপকারী। সবজি, চাল, ডাল, সয়াবিন তেলে সমস্যা না হলে মুরগির ছোট্ট এক টুকরা মাংস, কলিজা খিচুড়িতে মিশিয়ে খাওয়ান। সবজির মধ্যে আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, মূলা, শালগম, পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে।
হজমশক্তি ঠিক থাকলে সামান্য ধনেপাতা বা শাক দিয়ে দেখতে পারেন। নতুন খাবারের পদের পরিমাণ অল্প হতে হবে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যেসব শিশু মায়ের দুধের পরিবর্তে গরু বা অন্য কোনো দুধ বেশি খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বেশি। এমন অবস্থায় সবজির খিচুড়ি ও পানি খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আর বুকের দুধ খাওয়ার পরও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়, সেসব শিশুর মায়েদের পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি খেতে হবে।
শিশুকে মধু, ডিমের কুসুমও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে মধু না দেওয়াই ভালো। মধু দেবেন পরিমাণে খুবই কম। মাসে হয়তো দুই দিন। আধা চা-চামচ। ধীরে ধীরে দিন ডিমের কুসুম। বাইরের খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি খাবার বেশি খাওয়ান।
শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর পরিবর্তে তাকে খেলার ছলে খাওয়ান। মনে রাখবেন, সব শিশুর পছন্দ ও চাহিদা সমান নয়।
লেখক: চিকিৎসক
শিশুর খাবার
কোন বয়সে কতটুকু প্রয়োজন?
শিশুকে নিয়ে মা-বাবার চিন্তার শেষ নেই। চিন্তা বেশি শিশুর খাবার নিয়েই- কি
বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে, কতখানি খাওয়াতে হবে? পরামর্শ দিয়েছেন
আইসিডিডিআর'বির সেন্টার ফর নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি বিভাগের
বিজ্ঞানী ও আইসিডিডিআর'বি ঢাকা হাসপাতালের নিউট্রিশন ইউনিটের ক্লিনিক্যাল
প্রধান ডা. মো. ইকবাল হোসেন। লিখেছেন ডা. ফারহানা পারভীন ফ্লোরা জন্মের সময় শিশুর ওজন খুব কম থাকে। শরীর থাকে নাজুক। তাই সহজেই অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তাও কমে না। মায়ের চিন্তা আরো বেশি- শুধু বুকের দুধে পেট ভরছে তো? বুকের দুধের সঙ্গে একটু বাড়তি খাবার কী দিতে হবে? ওজন ঠিকমতো বাড়ছে তো? দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার কখন শুরু করতে হবে? টিভির বিজ্ঞাপনে দেখানো বাড়তি খাবারগুলো দেওয়াটা দরকার কি না?
একটু বড় হলেও চিন্তা থেকেই যায়। খাবারের দোকানের লোভনীয় সব ফাস্টফুড ওকে দেওয়া যাবে কি না? চিপস, কোল্ডড্রিংকস, আইসক্রিম ও চকোলেট খাবে? কিভাবে ওর শরীরে ভিটামিন আর খনিজ লবণের চাহিদা মেটানো যাবে ইত্যাদি প্রশ্ন আর সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় অভিভাবকদের। এই দ্বিধাদ্বন্দের দোলাচলে বহু শিশু বঞ্চিত হয় সঠিক পুষ্টি থেকে।
শিশুর প্রথম ছয় মাস
শিশু যদি ঠিকমতো বুকের দুধ পায়, তবে প্রথম ছয় মাস তার আর কোনো খাবারই দরকার পড়ে না। এমনকি পানিও না। মায়ের দুধে আছে শিশুর প্রয়োজনীয় সব উপাদান। এ উপাদানগুলো কোনো অবস্থায়ই বাইরের খাবার দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। শুধু বুকের দুধই পারে শিশুর পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে। তাই যেসব মায়ের বুকে দুধ আসে, তাদের অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। অনেক মা মনে করেন তাঁর বুকে দুধ পর্যাপ্ত আসছে না। মনে রাখবেন, বারবার বুকের দুধু দিতে হবে।
শিশু যত বেশি বুকের দুধ খাবে, তত বেশি বুকে দুধ আসবে। পাচ্ছে না বলে বুকের দুধ দেওয়া বন্ধ করবেন না। শিশুর নিয়মই হলো বারবার অল্প অল্প করে খাবে। এ সময় ওর পেট খুব ছোট থাকে বলে একবারে বেশি করে খেতে পারে না। একবার বুকের দুধ খাওয়ার ৪০-৫০ মিনিট পরই সে আবার ক্ষুধা বোধ করতে পারে। আবার যদি কারো বুকের দুধ সত্যিই কম আসে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু ওষুধ সেবন করলে পর্যাপ্ত দুধ আসে। আর যদি বুকে দুধ না আসে বা কম আসে সে ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজে নিজে বাজার থেকে কিনে দুধ খাওয়াবেন না।
প্রথম বাড়তি খাবার
শিশুর বয়স ছয় মাস অতিক্রান্ত হলেই বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে তৈরি থাকতে হবে। শুরুতে খুবই অল্প পরিমাণে খাবার দিন। খাবার হবে পেস্টের মতো নরম। দিতে হবে ছোট চামচে। কোনো অবস্থায়ই বোতল বা ফিডারে করে নয়। বাড়তি খাবারের কয়েকটি নমুনা দেওয়া হলো।
* দুধ-সুজি (এক টেবিল চামচ সুজির সঙ্গে দুই টেবিল চামচ তরল দুধ মিশিয়ে তৈরি)।
* ফলের রস (ফল থেকে চিপে রস বের করে তার সঙ্গে একটু খাবার পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। এতে বাচ্চার হজমে সুবিধা হবে।
* প্যাকেটজাত দুধ বা সুজি-জাতীয় ফরটিফাইড খাবার। এগুলোকেও পানি মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। তবে ঘরে তৈরি খাবারের পুষ্টিমান বেশি। অনেক শিশুই এগুলো খেলে ল্যাকটোজ ইন টলারেন্সের জন্য পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। তাই বাড়িতে তৈরি খাবারই হওয়া দরকার শিশুর প্রথম বাড়তি খাবার।
এক বছর বয়স পর্যন্ত
শিশু যখন প্রথম বাড়তি খাবার হজম করতে শেখে তখন প্রতি সপ্তাহে তাকে নতুন নতুন খাবার দিতে শুরু করুন। একই খাবার দিনের পর দিন দেবেন না। এতে সে একঘেয়ে বোধ করে এবং বাড়তি খাবার খেতে অপছন্দ করতে শুরু করে। এ সময় দিতে পারেন-
* খিচুড়ি। এতে থাকবে চাল, ডাল, তেল, লবণ প্রয়োজনমতো। সঙ্গে দিন কিছুটা সবজি।
* মাছ বা মাংস নরম পেস্টের মতো করে খাওয়াতে পারেন।
* ডিম নরম করে বা ডিমের হালুয়া করে খাওয়াতে পারেন।
* আলু বা পেঁপের নরম ভর্তা।
* ডিমের কুসুম
* ঘরে তৈরি দই ইত্যাদি।
তবে বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেটজাত খাবার বা দোকানের দই থেকে ঘরে তৈরি খাবার দিতে চেষ্টা করুন। চিপস, চানাচুর, কেক বা প্যাকেটজাত জুস শিশুর পুষ্টি মেটায় না। এগুলো খেলে শিশুর স্বাভাবিক ক্ষুধাবোধ নষ্ট হয়। সে আর ঘরে তৈরি খাবার খেতে চায় না।
অনেক মা মনে করেন, প্যাকেটজাত শিশু খাবারে পুষ্টি বেশি থাকে। বাস্তবে ঘরে তৈরি খাবারে পুষ্টি তো সঠিক থাকেই; সঙ্গে শিশুর সারা জীবনের সঠিক খাদ্যাভ্যাসও তৈরি হয়।
এক বছর পেরিয়ে গেলে
প্রথম জন্মদিনের পরই শিশুকে আস্তে আস্তে বাড়ির অন্যদের জন্য যেভাবে খাবার তৈরি করেন সে ধরনের খাবারগুলো দিন। যেমন- ভাত, কাঁটা ছাড়ানো মাছ, শাকসবজি, ফল, নরম মাংস ইত্যাদি। তাকে বেশি পরিমাণে না দিয়ে অল্প করে দিন। বড়দের খাবার দিচ্ছেন বলে তাকে বড়দের সমান খাবার দেবেন না। ওর ছোট্ট পেটটার কথা মনে রাখুন।
এভাবে যত ওর বয়স বাড়বে ততই সে নিজেই বেশি করে খাওয়া শিখবে। অভিভাবকদের কর্তব্য হলো, শুধু যথাসময়ে তার জন্য খাবার প্রস্তুত করে দেওয়া।
বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত খাবার
অনেক সময় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত খাবারও শিশুকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই কোনো অবস্থায়ই বাজারের খাবার দেব না- এ ধরনের নীতিও শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন- দুই বছরের কম বয়সী অনেক শিশুই আমাদের দেশে রক্তশূন্যতায় ভোগে। তাই বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুষ্টিকণা নামের প্যাকেটজাত খাবার বাজারজাত করছে। এতে আছে আয়রন, ভিটামিন, ফলিক এসিড, জিংকের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। ছয় মাসের পর থেকে দুই বছর বয়সীদের বা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের এটি খাওয়ানো যেতে পারে।
অনেকে দুধে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত পুষ্টি দ্রব্যাদি মেশান। এতে ক্ষতি নেই; কিন্তু এটির প্রয়োজনও নেই। গরু বা ছাগলের তরল দুধে যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান থাকে। এতে আর পুষ্টি মিশিয়ে শক্তিশালী করার দরকার পড়ে না।
ভিটামিন আর খনিজ লবণের চাহিদা মেটাতে
বাড়তি খাবার দেওয়ার যে কয়েকটি উদ্দেশ্য তার মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটানো। আমাদের দেশে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল রয়েছে, যা ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা খুব ভালোভাবেই মেটাতে পারে। যেমন- লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাক, কচু, শিম, টমেটো, বরবটি ইত্যাদি। ফলের মধ্যে আছে আমড়া, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আম, কাঁঠাল, বরই, কলা ইত্যাদি! এর বাইরে আমদানি করা বিদেশি ফলও আছে, তবে দেশি ফলই বেশি ভালো।
যদি শিশুকে এ ধরনের খাবার খাওয়ানো অভ্যাসে পরিণত করতে পারেন, তবে আর বাড়তি ভিটামিন ও খনিজ লবণ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। বাজারের প্যাকেটজাত বাড়তি খাবার তখনই প্রয়োজন পড়বে যখন শিশু এ ধরনের খাবার খাবে না বা কম খাবে।
তাই আগে বাজারের খাবারের কথা চিন্তা না করে প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়ান। তার পরও যদি মনে করেন আপনার শিশুর পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে না, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে বাড়তি খাবার দিতে পারেন।
বাড়তি খাবারে পেটের পীড়া
ছয় মাসের আগে শিশুকে বাড়তি খাবার দিলে তার কিছু অসুখ দেখা দিতে পারে। যেমন- অ্যালার্জি, ডায়রিয়া, কৌষ্ঠকাঠিন্য, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। ছয় মাস বয়সের পরও এ ধরনের কিছু সমস্যা সাময়িক সময়ের জন্য দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া শিশুকে এক বছর বয়সের আগে গরুর দুধ দিলে পেটের পীড়া, অ্যালার্জি, ডায়রিয়া হতে পারে।
বেড়ে ওঠার মাপকাঠি
সহজ কিছু উপায় আছে, যা দেখে আপনি নিজেই বুঝবেন সে ঠিক আছে কি না। যেমন- সে ঠিকমতো ঘুমায় কি না? প্রস্রাব-পায়খানা করে কি না? খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী কি না? অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে পারে কি না? ডাক দিলে শোনে কি না, কিছু দেখালে দেখতে পায় কি না? চার মাস বয়সে উপুড় হতে শিখেছে কি না, এক বছরের কাছাকাছি সময়ে হাঁটতে শিখেছে বা হাঁটার চেষ্টা করছে কি না?
এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আর দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সুত্রঃ-কালের কন্ঠ, ১৫ নভেম্বর ২০১২
No comments:
Post a Comment